অমর কানন মোদের অমর-কানন (omor kanon moder omor-kanon)

 রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ, তাল: কাওয়ালি

          অমর কানন মোদের অমর-কানন।
          বন কে বলে রে ভাই, আমাদের তপোবন
                            আমাদের তপোবন॥ 
 এর     দক্ষিণে 'শালী' নদী কুলুকুলু বয়,
 তার     কূলে কূলে শাল-বীথি ফুলে ফুল-ময়,
 হেথা     ভেসে আসে জলে-ভেজা দখিনা মলয়,
 হেথা     মহুয়ার মউ খেয়ে মন উচাটন॥
           দূর প্রান্তর-ঘেরা আমাদের বাস,
           দুধ-হাসি হাসে হেথা কচি দুব-ঘাস,
           উপরে মায়ের মতো চাহিয়া আকাশ,
           বেণু-বাজা মাঠে হেথা চরে ধেনুগণ॥
মোরা    নিজ হাতে মাটি কাটি নিজে ধরি হাল,
 সদা      খুশি-ভরা বুক হেথা হাসি-ভরা গাল,
মোরা     বাতাস করি ভেঙে হরিতকী-ডাল,
 হেথা      শাখায় শাখায় পাখি, গানের মাতন॥
            প্রহরী মোদের ভাই 'পূরবী' পাহাড়,
            'শুশুনিয়া' আগুলিয়া পশ্চিম দ্বার,
 ওরে      উত্তরে উত্তরী কানন বিথার
 দূরে      ক্ষণে ক্ষণে হাতছানি দেয় তালি-বন॥
 হেথা     ক্ষেত-ভরা ধান নিয়ে আসে অঘ্রাণ,
 হেথা      প্রাণে ফোটে ফুল, হেথা ফুলে ফোটে প্রাণ,
 ওরে      রাখাল সাজিয়া হেথা আসে ভগবান,
মোরা     নারায়ণ-সাথে খেলা খেলি অনুখন॥
মোরা     বটের ছায়ায় বসি করি গীতা পাঠ,
            আমাদের পাঠশালা চাষি-ভরা মাঠ,
            গাঁয়ে গাঁয়ে আমাদেত মায়েদের হাট,
            ঘরে ঘরে ভাই বোন বন্ধু স্বজন॥

  • রচনাকাল ও স্থান : গানটি ১৩৩২ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 'ছায়ানট' কাব্যগ্রন্থে 'অমর-কানন' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গানটির নিচে স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- 'গঙ্গাজলঘাটী, বাঁকুড়া/আষাঢ় ১৩৩২। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৬ বৎসর ১ মাস।

    উল্লেখ্য, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুলাই (১৩৩২ বঙ্গাব্দ) নজরুল বাঁকুড়া যুব ও ছাত্র সমাজ এবং গঙ্গাজল ঘাটী জাতীয় বিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বাঁকুড়া সফরে যান। স্থানীয় অমর নামক এক স্বেচ্ছাসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই স্কুলটি গড়ে উঠেছিল। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বিদ্যালয়ের আশ্রমেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিষ্ঠাতা অমরের নামানুযায়ী বিদ্যালয়টির নাম হয় "অমর কানন"। বীর অমরের কীর্তিকলাপ শুনে কবি খুবই অনুপ্রাণিত এবং অভিভূত হয়ে পড়েন। এই বিদ্যালয়ের উদ্বোধন-সঙ্গীত হিসেবে নজরুল রচনা করেছিলেন এই গানটি। তিনি এই অনুষ্ঠানে গানটি নিজেই গেয়েছিল।

    'ছায়ানট' কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত এই গানের পাদটীকায় উল্লেখ ছিল-'বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাঘাটী জাতীয় বিদ্যালয়টা নদী পাহাড় বন ও মাঠঘেরা একটী প্রান্তরে। এর নাম অমর কানন। এই বিদ্যালয় অমর নামক একটী তরুণের তপস্যার ফল। সে আজ স্বর্গে। এই গানটী ঐ বিদ্যষালয়ের ছেলেদের জন্য লিখিত।'
     
  • গ্রন্থ:
    • ছায়ানট
      • প্রথম সংস্করণ [বর্মণ পাবলিশিং হাউস,২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫, ৬ আশ্বিন ১৩৩২] শিরোনাম 'অমর-কানন'। পৃষ্ঠা ৮৫-৮৬]
      • নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, মে ২০১১। ছায়ানট। শিরোনাম: 'অমর-কানন'। পৃষ্ঠা ৫১-৫২ ]
    • নজরুল গীতিকা
      • প্রথম সংস্করণ [১৬ ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। জাতীয় সঙ্গীত। ১২। বেহাগ-খাম্বাজ-কাওয়ালী। পৃষ্ঠা ৪০-৪১]
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২। নজরুল গীতিকা।   নজরুল গীতিকা। জাতীয় সঙ্গীত। ২৮। বেহাগ-খাম্বাজ-কাওয়ালী।। পৃষ্ঠা: ১৯২-১৯৩]
  • পত্রিকা: সাপ্তাহিক 'বিজলী' [শ্রাবণ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২৫) । 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।