এবার নবীন-মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন (ebar nobin montre hobe janani tor udbodhon)

এবার     নবীন-মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন।
            নিত্যা হয়ে রইবি ঘরে, হবে না তোর বিসর্জন॥
            সকল জাতির পুরুষ-নারীর প্রাণ
            সেই হবে তোর পূজা-বেদী মা তোর পীঠস্থান;
সেথা     শক্তি দিয়ে ভক্তি দিয়ে পাতবো মা তোর সিংহাসন॥
সেথা     রইবে নাকো ছোঁয়াছুঁয়ি উচ্চ-নীচের ভেদ,
            সবাই মিলে উচ্চারিব মাতৃ-নামের বেদ।
মোরা     এক জননীর সন্তান সব জানি,
            ভাঙব দেয়াল, ভুল্‌ব হানাহানি
            দীন-দরিদ্র রইবে না কেউ সমান হবে সর্বজন,
            বিশ্ব হবে মহাভারত, নিত্য-প্রেমের বৃন্দাবন॥

  • ভাবসন্ধান: দুর্গাপূজা উপলক্ষে কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিজয়া নামক সঙ্গীতালেখ্যে অন্তর্ভুক্ত সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত শেষ গান। সাধারণভাবে এটি আগমনী গান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রথাগতভাবে এই গানটি শুধু দেবীর বন্দনামূলক আবাহনী গান নয়।

    প্রথাগতভাবে দেবীর উদ্বোধন করা হয় যে মন্ত্রাদিতে, কবি তার পরিবর্তে দেবীকে আহ্বান করেছেন নবতর মন্ত্রে। প্রথাগতভাবে বিজয়া দশমীতে দেবীর বিসর্জনের রীতি অগ্রাহ্য করে, কবি নবতর মন্ত্রবলে আবাহিতা দেবীকে  চিরকালের জন্য সংসারে স্থিতি দশায় রাখতে চান। 

    নতুন মন্ত্রে উদ্বোধিত এই দেবী পূজা-বেদী পার্থিব কোনো মন্দিরে স্থাপিত হতে পারে না। কবি মনে করেন, এই দেবীর চিরস্থায়ী পূজাবেদী স্থাপিত হবে- জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের মনের মণিকোঠায়। সেটাই হবে শ্রেষ্ঠ পীঠস্থান। সেই মণিকোঠায় শক্তি ও ভক্তির অর্ঘ দিয়ে দেবীর প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হবে। সিংহবাহিতা দেবী, তার বাহন সিংহকে ত্যাগ করে মনের বেদীতে প্রতিষ্ঠাতা হবেন। সেটাই হবে তাঁর নবতর সিংহাসন।

    আভোগে এসে কবি 'অন্তরার মনোবেদী'র ভাবকে আরও সম্প্রসারিত করেছেন। কবি মনে করেন, এই বেদী হবে- স্পর্শ-দোষ মুক্ত, বর্ণভেদ বিবর্‌জিত। মাতৃদেবীরূপে সংস্থাপিতা দেবীর নামই হবে বেদমন্ত্র। সঞ্চারীর ভক্তিভাবের মন্ত্র আভোগে এসে  হয়ে উঠেছে প্রতীজ্ঞামন্ত্র। কবি মনে করেন- সবাই দেবীর সন্তান। তাই সন্তানদের আত্মকলহ দূর করে মহমিলনের পীঠস্থান প্রতিষ্ঠা করার প্রতীজ্ঞামন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে আভোগে। এই প্রতীজ্ঞা হলো- অস্পৃশ্যবাদের দেয়াল ভাঙার, আত্মকলহের হানাহানি রোধের। সাম্যবাদী দর্শনে সবাই হবে সমনাধিকারী। সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের মহাসম্মেলনে ভারতবর্ষ হয়ে উঠবে মহাভারত (মহান ভারত)। মানুষ মানুষে সম্প্রীতি ও সহমর্মিতায়, কল্যাণকামনায় বিশ্ব হয়ে উঠবে বৃন্দাবনরূপী মহমিলনের লীলাস্থান।
  • বেতার:
    • বিজয়া। সঙ্গীতালেখ্য। কলিকাতা-ক। প্রথম অধিবেশন। ২২শে অক্টোবর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ  (রবিবার, ৫ কার্তিক ১৩৪৬),  সকাল ৯-৯.৪৪ মিনিট]।
              [সূত্র:
      • বেতারজগৎ। ১০ম বর্ষ ২০শ সংখ্যা। বিজয়া দশমী [১৬ অক্টোবর ১৯৩৯' (বুধবার ১ কার্তিক ১৩৪৬) সংখ্যা]
      • The Indian Listener, Vol IV. No 20, 22 October, 1939, Page :  1439 ]
  • গ্রন্থ:  
    • জুলফিকার
      • প্রথম সংস্করণ। ১৫ অক্টোবর ১৯৩২ (শনিবার ২৯ আশ্বিন ১৩৩৯)। ১১ সংখ্যক গান। ভৈরবী-কার্ফা
      • নজরুল রচনাবলী,  জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। চতুর্থ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা।  জ্যৈষ্ঠ ১৪১৪, মে ২০০৭,  জুলফিকার। ১১ সংখ্যক গান।  ভৈরবী-কার্ফা। পৃষ্ঠা: ২৯৭।
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। ১২৯ সংখ্যক গান।।
    • বিজলী ধর। সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা (আশ্বিন ১৩৪৭)। [নমুনা]
    • নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি, প্রথম খণ্ড (জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৩৭৫। পৃষ্ঠা: ৩৫-৩৭] [নমুনা]
    • নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি ঊনপঞ্চাশতম খণ্ড । স্বরলিপিকার: ইদ্‌রিস আলী। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, কার্তিক ১৪২৬। নভেম্বর ২০১৯। পৃষ্ঠা: ৯৩-৯৬ [নমুনা]
  • পত্রিকা:
    • বেতার জগৎ। ১০ম বর্ষ ২০শ সংখ্যা। পুরুষ ও নারীদের গান। পৃষ্ঠা ৭৬৭
    • সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা [আশ্বিন ১৩৪৭ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৪০)। আগমনী। মিশ্র-দাদরা। কথা নজরুল ইসলাম। সুর: নিতাই ঘটক। স্বরলিপি: কুমারী বিজলী ধর। পৃষ্ঠা: ২৪৫-২৪৮] [নমুনা]
  • রেকর্ড:
    • এইচএমভি রেকর্ড। সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৫০)। এন ২৭৩৯৫। শিল্পী: সত্য চৌধুরী [শ্রবণ নমুনা]
    • [মাসুদা আনাম কল্পনা (শ্রবণ নমুনা)]
       
  • পত্রিকা: সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা [আশ্বিন ১৩৪৭ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৪০)। আগমনী। মিশ্র-দাদরা। কথা: নজরুল ইসলাম। সুর: নিতাই ঘটক। স্বরলিপিকার: কুমারী বিজলী ধর। পৃষ্ঠা: ২৪৫-২৪৮] [নমুনা]
     
  • সুরকার: নিতাই ঘটক
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: 
    • বিজলী ধর। সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা (আশ্বিন ১৩৪৭)। [নমুনা]
    • নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি, প্রথম খণ্ড (জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৩৭৫। পৃষ্ঠা: ৩৫-৩৭] [নমুনা]
    • ইদ্রিস আলী। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত গানের [শিল্পী: সত্য চৌধুরী] সুরানুসারে স্বরলিপিটি নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি ঊনপঞ্চাশতম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। [নমুনা]
       
  • পর্যায়
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। দুর্গা। জগৎকল্যাণী। দেবীর আহ্বান
    • সুরাঙ্গ: রাগাশ্রয়ী
    • গ্রহস্বর: সা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।