এলো ঈদল-ফেতর এলো ঈদ ঈদ ঈদ (elo edol fetor elo eid eid eid)
এলো ঈদল-ফেতর এলো ঈদ ঈদ ঈদ।
সারা বছর যে ঈদের আশায় ছিল নাক’ নিদ॥
রোজা রাখার ফল ফ’লেছে দেখ রে ঈদের চাঁদ,
সেহরি খেয়ে কাটল রোজা, আজ সেহেরা বাঁধ,
ওরে বাঁধ আমামা বাঁধ।
প্রেমাশ্রুতে ওজু ক’রে চল্ ঈদগাহ মসজিদ॥
(আজ) ছিটায় মনের গোলাব-পাশে খুশির গোলাব-পানি
(আজ) খোদার ইস্কের খুশবু-ভরা প্রাণের আতরদানি,
ভরল হৃদয়-তশ্তরিতে শিরনি তৌহিদ॥
(দেখ্) হজরতের হাসির ছটা ঈদের চাঁদে জাগে
সেই চাঁদেরই রঙ যেন আজ সবার বুকে লাগে,
(এই) দুনিয়াতেই মিটল ঈদে বেহেশ্তী উমিদ॥
- ভাবসন্ধান: বেতার নাটক ঈদ। এবং রেকর্ড নাটক ঈদল ফেতর-এ এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা চান্দ্র-বৎসর অনুসরণে এক মাস রোজা রাখার পর, আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঈদল-ফেতর নামক ধর্মীয় ব্রত শেষ করেন। তাই মুসলমানরা সারা বছর এই ঈদের জন্য প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন।
এই গানে কবি সকল রোজদারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন- সারা মাস রোজা রাখার ফসল হিসেবে ঈদের চাঁদ উঠেছে। রোজার মাসে (রমজান মাসে), প্রতি রাতির শেষে রোজা রাখার নিয়ত করে সেহেরি (শেষ রাতে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য) খেয়ে রোজা রেখেছেন রোজদাররা। ঈদের চাঁদ দেখার পর, সবাইকে ঈদের আনন্দোৎসবের জন্য সেহেরা (বিবাহের পূর্বে পরিধেয় বরের সাজসজ্জার অনূরূপ সাজ) এবং আমামা (পাগড়ি) বেঁধে আল্লাহর প্রেমের আনন্দাশ্রু নিয়ে ঈদগাহে যেতে আহ্বান করা হয়েছে।
ঈদের এই আনন্দোৎসবের উপকরণসমূহকে কবি নানা উপমায় উপস্থাপিত করেছেন। ঈদের দিনে গোলাপ-পাশ (গোলাপ জল ছিটানোর জন্য ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের পাত্র) দিয়ে যে খুশির গোলাপ-পানি ছিটানো হয়, তার সাথে মিশে থাকে মূলত মনের গোলাপ-পানির সৌরভ। খোদার ইস্কের (খোদার প্রেমের) সৌরভে ভরে থাকে প্রাণের আতরদানি। হৃদয়রূপ তশতরিতে পরিবেশিত হয় একেশ্বরের শিরনি (ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিবেশিত এক ধরনের পায়েস)।
কবি অনুভব করেছেন ঈদের চাঁদের স্নিগ্ধ মধুর রূপের সাথে মিশে আছে যেন নবির হাসির ছটা। সেই চাঁদের ছটাই সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই ঈদের ভিতর দিয়েই দুনিয়াতেই মেটে যায় বেহশতের উমিদ (বেহশত-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা)।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪১ খ্রিষ্টব্দের ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার ৬ কার্তিক ১৩৪৮) কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে ঈদ নামক শ্রুতিনাটক প্রচারিত হয়েছিল। এই নাটকে এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ৫ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। গান সংখ্যা ১১৮২। নাটিকা : ‘ঈদ’ (বেদৌরা'র গান)।
- রেকর্ড: ঈদল ফেতর। রেকর্ড নাটক। এইচএমভি [ডিসেম্বর ১৯৩৬ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৩)। এন ৯৮২৩। শিল্পী: ধীরেন্দ্রনাথ দাস। চরিত্র: ফকির] পরিচালনা: ধীরেন্দ্রনাথ দাস।
রেকর্ডে এর জুড়ি গান ছিল-- ফুরিয়ে এলো রমজানেরি মোবারক মাস [তথ্য]
- ফুরিয়ে এলো রমজানেরি মোবারক মাস [তথ্য]
- বেতার: ঈদ। (ঈদল ফিতর উপলক্ষে প্রচারিত শ্রুতি নাটক) [১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর (বুধবার ৫ কার্তিক ১৩৪৮)]
সূত্র:- বেতার জগৎ। ২২ অক্টোবর (বুধবার, ৫ কার্তিক ১৩৪৮)। পৃষ্ঠা: ১২১০
- The Indian Listener Vol VI No. 20, page 59
- পত্রিকা: ইত্তেফাক। ঈদ (নাটক)। [৭ বৈশাখ ১৩৬৫]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলাম ধর্ম। আনুষ্ঠানিক। ঈদ (ঈদুল-ফেতর)