এলো এলো রে ঐ সুদূর বন্ধু এলো (elo elo re oi sudur bondhu elo)
এলো এলো রে ঐ সুদূর বন্ধু এলো।
এলো পথ চাওয়া এলো হারিয়ে পাওয়া
মনের আঁধার দূরে গেল, ঐ বন্ধু এলো॥
এলো চঞ্চল বন্যার ঢল মন্থর স্রোত-নীড়ে,
এলো শ্যামল মেঘ-মায়া তৃষ্ণিত গগন ঘিরে;
তার পলাতকা মৃগে বন ফিরে পেল॥
এলো পবনে বিহ্বল চঞ্চলতা
যেন শান্ত ভবনে এলো সারা ভুবনের কল-কথা।
অলি গুঞ্জরি' কয় জাগো বনবীথি;
ডাকে দখিনা মলয়-এলো এলো অতিথি;
বাজে তোরণ দ্বারে বাঁশরি গীতি,
দুখ নিশি পোহাল, আঁখি মেল॥
- ভাবার্থ: এই গানে বসন্তকে পরমাকাঙ্ক্ষিত বন্ধু হিসেবে বরণ করে নিয়েছেন কবি। এই বন্ধুর আগমনের প্রত্যাশ্যায় তিনি পথ পানে চেয়েছিলেন বহুদিন। তার আগমনে কবির আসা-না-আসার অন্ধকারের অবসান হয়েছে। এই গানের ভিতর দিয়ে বসন্তের আগমনী বার্তা সবাইকে কবি সে কথা জানিয়ে দিতে চেয়েছেন।
প্রকৃতি যে ধীর প্রবাহে বাঁধা পড়েছিল, বসন্তের আগমনে তাতে যেন চাঞ্চল্য ফিরে এলো। তৃষ্ণার্ত আকাশে যে হাহাকার ঘিরে ছিল, তাতে বসন্তের শ্যামল মেঘমায়ায় দূরীভূত হয়ে গেল। যেন বহুদিনের পলাতকা চঞ্চল বসন্তরূপী হরিণ তার ঘর খুঁজে পেলো আজ।
বসন্তের বিহ্ববল চঞ্চল বাতাস যেন- শান্ত ভবনে সারা ভুবনের চঞ্চলতা ছড়িয়ে দিল। তারি সাথে পুষ্প অনুরাগে অলিকূল বলে- 'বসন্তের দখিনা বাতাস এলো অতিথির বেশে, এবার 'জাগো বনবীথি'। বসন্তের আগমনে বাজে প্রাসাদের তোরণে বাঁশির সুমুধুর গীত, প্রকৃতির দুখ-রাতির হয় অবসান। তাই সবাইকে কবি প্রকৃতিকে আঁখি মেলে জেগে উঠতে আহ্বান করেছেন। তিনি একা বসন্তোৎসব উপভোগ করতে চান না, তাই সবাইকে আহ্বান করেছেন আগত বসন্তোৎসবের সম্মেলনে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ ফেব্রুয়ারি মাসে (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪১) মাসে এইচএমভি প্রকাশিত 'বাসন্তিকা' শ্রুতি নাটিকা প্রকাশ করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৮ মাস।
- রেক্র্ড:
- এইচএমভি। ' বাসন্তিকা' নাটিকা। ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪১)। এন ৭৩৩৫। শিল্পী বীণাপাণি। [শ্রবণ নমুনা]
- টুইন। বিদ্যাসুন্দর। নাট্যকার বরদাপ্রসন্ন দাসগুপ্ত। জুলাই ১৯৩৭। এফটি ১২০৪৩। চরিত্র সখীগণ।
- ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার, ৫ আশ্বিন ১৩৪৪) নজরলের সাথে রেকর্ড কোম্পানির চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে এই গানটির উল্লেখ ছিল।
- বেতার: বাসন্তীকুঞ্জ [সঙ্গীতানুষ্ঠান] কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [২৭শে এপ্রিল ১৯৪০ (শনিবার ১৪ বৈশাখ ১৩৪৭)] সান্ধ্য অনুষ্ঠান। ৭.১৫-৭.৪৪।
[সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ৮ম সংখ্যা। [১৬ এপ্রিল ১৯৪০] পৃষ্ঠা: ৪৩৩
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২]। গান সংখ্যা ৫৪২। পৃষ্ঠা: ১৬৬
- বাসন্তিকা' নাটিকা।
- অপ্রকাশিত নজরুল [১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল আজিজ সম্পাদিত]।
- নজরুল রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। বাসন্তিকা (একাঙ্ক নাটিকা)। প্রথম দৃশ্য। বাসন্তিকার গান। পৃষ্ঠা ৩৫৬-৩৫৭] [বাসন্তিকার মুদ্রিত পাঠ]
- নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, ঊনত্রিশতম খণ্ড। স্বরলিপিকার। নীলিমা দাস। নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। শ্রাবণ ১৪১৩/আগষ্ট ২০০৬] পঞ্চম গান। [নমুনা]
- নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, আটচল্লিশতম খণ্ড। স্বরলিপিকার: ইদ্রিস আলী। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, কার্তিক ১৪২৬। নভেম্বর ২০১৯। পৃষ্ঠা: ৫৮-৫৯ [নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নীলিমা দাস। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত গানের [শিল্পী: বীণাপাণি] সুরানুসারে স্বরলিপিটি নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি ঊনত্রিশতম খণ্ডে, অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। [নমুনা]
- ইদ্রিস আলী। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত গানের [শিল্পী: সমবেত] সুরানুসারে স্বরলিপিটি নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি আটচল্লিশতম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, ঋতু, বসন্ত
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সুর
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: সরা