এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা (elo borsha shyam sorosa priyo-dorosha)
এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা।
দাদুরি পাপিয়া চাতকী বোলে নব জলধারা-হরষা॥
নাচে বন-কুন্তলা যামিনী উতলা
খুলে পড়ে গগনে দামিনী মেখলা,
চলে যেতে ঢ'লে পড়ে অভিসারে চপল যৌবন-মদ অলসা॥
একা কেতকী বনে কেকা কুহরে,
বহে পূব-হাওয়া কদম্ব শিহরে।
দুরন্ত ঝড়ে কোন্ অশান্ত চাহি রে
ঘরে নাহি রহে মন, যেতে চায় বাহিরে,
যত ভয় জাগে তত সুন্দর লাগে শ্রাবণ-ঘন-তমসা॥
- ভাবার্থ: জগৎঘটক রচিত 'জীবনস্রোত' গীতি-আলেখ্যে বর্ষার 'আগমনী গান' হিসেবে ব্যবহৃত নজরুলের রচিত এই গানে বর্ষার একটি নিটল চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। এই গানের প্রথমাংশে কবি বর্ষাঋতুকে বর্ষাকন্যারূপে উপস্থাপন করেছেন। দ্বিতীয়াংশে ফুটে উঠেছে বর্ষার আবহে নিঃসঙ্গ প্রেমিকের মনবাসনার কথা। সেই সাথে এই গানে ফুটে উঠেছে ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ বর্ষণ- সিক্ত রাত্রির ভয়ঙ্কর-সুন্দরের রূপচিত্র।
বর্ষার আগমনী বার্তা দিয়ে গানটির শুরু হয়েছে। প্রকৃতিতে কবির প্রিয় ঋতু শ্যামল সরসা বর্ষা- বর্ষাকন্যা রূপে এসেছে। তার আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে - দাদুরী (ব্যাঙ), পাপিয়া, চাতকীর সপ্রণয় ডাকে এবং বর্ষার নববর্ষণের আনন্দে। তার আন্দোলিত কেশরাশির মতো বনরাজির সাথে রাত্রির প্রকৃতি উতলা হয়ে ওঠেছে। আকাশে তার মেখলারূপী বজ্র-বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে। চপল অভিসারিণী বেশে চলার পথে সে যৌবন-মদির আবেশে ঢলে ঢলে পড়ে। মূলত এই সকল রূপকতার মধ্য দিয়ে নববর্ষার অস্থিরতাকেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
গানটির দ্বিতীয়াংশে ঝঞ্ছাবিক্ষুপ্ত রাতে প্রেমিকর নিঃসঙ্গ মনে সঙ্গকামনায় অশান্ত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির দুরন্ত ঝড়ের সাথে তাঁর মনও উতলা হয়ে ওঠে। তিনি ভয় ধরানো শ্রাবণ-ঘন-তমসার মাঝে দেখতে পান- বর্ষার অপরূপ সৌন্দর্য। তাঁর মনে জেগে উঠে এই ভয়ঙ্কর সুন্দর-সন্দরশনের কামনা। তাই চপলা অভিসারিণী বর্ষার কন্যার সঙ্গলাভের আশায়, ভয়ঙ্কর জেনেও সৌন্দর্যের টানে তিনি ঘর ছেড়ে বাইরে যেতে চান।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু যায় নি। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃ্হস্পতিবার ১৪ ফাল্গুন ১৩৪২), জগৎঘটকের রচিত জীবনস্রোত গীতি-আলেখ্য, কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। এই নাটকে এ গানটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৭ মাস।
- পত্রিকা: কবিতা [কার্তিক-পৌষ ১৩৫১ বঙ্গাব্দ (নভেম্বর ১৯৪৪)]।
- বেতার: জীবনস্রোত [গীতি-আলেখ্য। রচনা জগৎঘটক। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬। ১৪ ফাল্গুন ১৩৪২। সান্ধ্য অনুষ্ঠান: ৮.৩০-৯.১৪ মিনিট
[সূত্র:- বেতার জগৎ। সপ্তম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা। ১৬ ফেব্রুয়ারি. ১৯৩৬ [পৃষ্ঠা ১৭২]
- The Inidian Listener পত্রিকার ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ সংখ্যা। পৃষ্ঠা ২৩২]
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২]। গান সংখ্যা ১২০২]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি। বর্ষা