এলো রমজানেরি চাঁদ এবার দুনিয়াদারি ভোল (elo romjaneri chad ebar duniadari bhol)
এলো রমজানেরি চাঁদ এবার দুনিয়াদারি ভোল
সারা বরষ ছিলি গাফেল এবার আঁখি খোল্॥
এই একমাস রোজা রেখে
পরহেজ থাক গুনাহ্ থেকে
কিয়ামতের নিয়ামত তোর ঝুলি ভরে তোল্॥
বন্দী রহে এই মাসে শয়তান মালাউন
(তার) এই মাসে যা করবি সওয়াব দর্জা হাজার গুণ।
ভোগ বিলাসে মাখ্লি যে পাঁক
রমজানে তা হবে রে সাফ
এফতারে তোর কর রে সামান আল্লা রসুল বোল্॥
- ভাবসন্ধান: হিজরি বর্ষপঞ্জির নবম মাস হলো রমজান। এই মাসের প্রথম দিনের চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ২৯ বা ৩০ দিনে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রোজা রাখে। সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, ইন্দ্রিয় তৃপ্তি এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নিয়তে রোজা রাখা হয়। তাই এই মাসকে সংযমের মাসও বলা হয়। এই গানে মূলত রমজানের মহিমা উপস্থাপন করা হয়েছে- ইসলামী ধর্মদর্শনের আলোকে।
এই গানের মাধ্যমে সবাইকে ডেকে কবি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন- রমজানের চাঁদ দেখা গেছে, এবার দুনিয়ার সকল প্রকার ভোগ বিলাস ত্যাগ করে নিজেকে রোজার জন্য প্রস্তুত করার কথা। সারা বছর ধরে ধর্মের নির্দেশ গাফেল (অমনোযোগী) হয়ে পাপের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল যারা, তারা যেন রমজানের আদরশের দিকে দৃষ্টিপাত করে। কবি সবাইকে বলছেন- তাঁরা যেন সকল পাপ পরহেজ (পরিহার) ক'রে একমাস রোজা রাখে। এই একমাসের রোজা রাখার বদৌলতে তার পূণ্যের থলি ভরে উঠবে, যা কিয়ামতের দিনে নিয়ামতরূপে (কল্যাণকর) দেখা দেবে।
ইসলামি ভাবদর্শনে সবাইকে কবি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, রমজান মাস শয়তান এবং মালাউনেরা (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত যারা) বন্দী দশায় থাকবে। আর এই মাসের পূ্ণ্যের ফল হিসেবে সওয়াব পাওযা যাবে অন্যান্য দিনের সওয়াবের চেয়ে হাজার গুণ। সারা বছর পাপপঙ্কিলতায় ডুবে থেকে নিজেকে অপবিত্র করে তুলেছে যারা, রমজান মাসের রোজা তাদেরকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে তুলবে। তাই রোজার শেষে ইফতারকে সম্পদের মতো গ্রহণ করে, সবাইকে আল্লাহ ও রসুলের নিদরেশ মান্য করে, তাঁদের স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ -পৌষ ১৩৪৩) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি গানটি প্রথম রেকর্ড করে। সেই অনুযায়ী, ধারণা করা যায় যে, গানটি নজরুল ইসলামের ৩৭ বৎসর ৬ মাস বয়সে রচিত হয়েছিল।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২]। গান সংখ্যা ৪১৭
- রেকর্ড: এইচএমভি। ডিসেম্বর ১৯৩৬ (অগ্রহায়ণ -পৌষ ১৩৪৩)। এন ৯৮২২। রাবেয়া খাতুন [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি চতুর্দশ খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট)। রেকর্ডে রাবেয়া খাতুনের গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। সপ্তম গান [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলাম ধর্ম। রমজান
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: সা