এসো ঠাকুর মহুয়া বনে ছেড়ে বৃন্দাবন (esho thakur mohuya bone chhere brindabon)
এসো ঠাকুর মহুয়া বনে ছেড়ে বৃন্দাবন,
ধেনু দেব বেণু দেব মালা চন্দন॥
কেঁদে কেঁদে কয়লা খাদে যমুনা বহাব;
পলাশ বনে জাগরণে নিশি পোহাব
রাধা হয়ে বাঁধা দেব আমার প্রাণ মন॥
মোর নটকান রঙ শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে,
পীত ধড়া পরাব, নীল অঙ্গ ঘিরে।
পিয়াল ডালে দোলনা বেঁধে দুলিব দুজন॥
ভাসুর-শ্বশুর দ্যাখে যদি করব নাকো লাজ
বলব আমার শ্যামের বাঁশি বাজ রে আবার বাজ
শ্যাম তোমার লাগি জাতি কুল দিব বিসর্জন॥
- ভাবসন্ধান: কোন এক কৃষ্ণ-অনুরাগিণী, কৃষ্ণকে বৃন্দাবন ছেড়ে তাঁর দেশের মহুয়াবনে আসার আহ্বান করেছেন ভক্তি ও প্রেমের যুগপদ আসক্তিতে। গানটির বিবরণ থেকে জানা যায়, এই অনুরাগিণী বিবাহিতা। রাণীগঞ্জের কয়লা খনির মহুয়া বন ঘেরা অঞ্চলে। এ গানের সুরও এই অঞ্চলের ঝুমরের অঙ্গের।
এই গানের কৃষ্ণ-অনুরাগিণীর প্রেম ভক্তিরসকে অতিক্রম করে শৃঙ্গার রসে উদ্বেলিত। তিনি তাঁর এই আত্মনিবেদনে বৃন্দাবনের কোনো কিছুই অপূর্ণ রাখতে চান না। কৃষ্ণকে প্রলোভিত করার জন্য, তিনি বৃন্দাবনের অনুরূপ চড়ানোর জন্য গাভী এবং বাজাবার জন্য বাঁশী এবং ভক্তি ও প্রেমে ভরা মালা-চন্দন দিতে চান। তিনি তাঁর চোখের জলে কয়লার খাদকে যমুনা করে দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। প্রেমে উদ্বেলিত রাধার মতই তিনি পলাশ বনে নির্ঘুম রাত্রি কাটাবেন এবং কৃষ্ণকে নিবেদন করবেন প্রাণমন।
অনুরাগিণী তাঁর নটকানো রঙের (বাসন্তী রঙের) শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে, কৃষ্ণের নীল অঙ্গের জন্য হলুদ পোশাক বানিয়ে দেবেন। তারপর পিয়াল ডালে দোলনা বেঁধে দুজনে দুলবেন- দোল-ফাগুনের দোলনায়। যদি ভাসুর শ্বশুরকে দেখেও তিনি লজ্জিতা হবেন না। তিনি শ্যামের প্রেমের বাঁশি বারবার শুনতে চাইবেন। এই অনুরাগিণী শ্যামকে তাঁর এই প্রেম নিবেদনা জাতি কুল বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিতা হবে না।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪৮) মাসে হিন্দুস্তান রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ৭ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০০৩। গান সংখ্যা ৮১২]
- রেকরড: হিন্দুস্থান। ডিসেম্বর ১৯৪১ (অগ্রহায়ণ -পৌষ ১৩৪৮)। এইচ ৯৭১। শিল্পী: কালীপদ সেন। সুর: নিতাই ঘটক। [শ্রবণ নমুনা] [কানিজ সিম্পি (শ্রবণ নমুনা)]
সুরকার: নিতাই ঘটক
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সালাউদ্দিন আহ্মেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, পঁচিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ভাদ্র, ১৪১২/আগস্ট ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ] অষ্টম গান। [নমুনা]
- পর্যায়: