ওগো চৈতী রাতের চাঁদ, যেয়ো না (ogo choiti raater chad jeyo na)
ওগো চৈতী রাতের চাঁদ, যেয়ো না
সাধ না মিটিতে যেতে চেয়ো না॥
হের তরুলতায় কত আশার মুকুল,
ওগো মাধবী-চাঁদ আজো ফোটেনি ফুল,
তুমি যেয়ো না, প্রিয় যেয়ো না─
ঝরা মুকুলে বনবীথি ছেয়ো না
তুমি যেয়ো না, প্রিয় যেয়ো না, ওগো যেয়ো না॥
আজো ফুলের নেশায় পাগল দখিন হাওয়া
আজো ভোলেনি পাপিয়া 'পিয়া পিয়া' গাওয়া
তুমি এখনি বিদায়-গীতি গেয়ো না
তুমি যেয়ো না, প্রিয় যেয়ো না॥
- ভাবসন্ধান: গানটির বিষয়াঙ্গ প্রকৃতি (মহাজাগতিক)। চৈতালি চাঁদনি রাতের শেষে ধীরে ধীরে গ্রীষ্মের প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে থাকে পৃথিবীর জীব-জগতে। বসন্ত-বিদায়ের শেষ সঙ্কেত বহে আনে চৈতালি চাঁদনি রাত। প্রকৃতিতে বসন্তের বিদায়ে জীবজগতের তরুলতার পুষ্প-কোড়কে,পাখির ডাকে ফুটে ওঠে অচরিতার্থ কামনার ব্যর্থ কামনা। কবি চৈতালি চাঁদের কাছে সকাতর নিবেদন করেছেন এই গানে, যেন অসময়ে প্রকৃতির সকলের সাধ অপূর্ণ রেখে সে অস্ত চলে না যায়। বসন্তের কাছে যেমন চৈতালি চাঁদ প্রিয়তর, কবির কাছেও তেমনটি। তাই গানটিতে কবি চৈতালি চাঁদনি রাতকে ‘প্রিয়’ সম্বোধন করেছেন। এই গানে তাই বারা বার ফিরে আসে কাতর অনুরোধ- 'তুমি যেয়ো না, প্রিয় যেয়ো না'।
বসন্ত শেষের চাঁদে কবি দেখেছেন মাধবী-চাঁদের (বৈশাখী-চাঁদ) বৈশাখের রূপ। তাই কবি এই চাঁদকে সকাতর নিবেদনে বলেছেন যে,তার জন্য তরুলতায় পুষ্প বিকাশের প্রতীক্ষায় আছে। এদের বাসনাকে অতৃপ্ত রেখে সে যেন চলে না যায়। তরুলতার মুকুল ফুল হয়ে ফুটে ওঠার আগেই যেন ঝরে না পড়ে।
কবি বলেন বসন্তের শেষ হলেও প্রকৃতিতে তার ছোঁয়া লেগে আছে। এখনো ফুলের সঙ্গলাভের নেশায় দখিনা পাগল বাতাস বয়ে চলেছে, এখনো বসন্তের পাপিয়া প্রেয়সীকে আহবান করে পিয়া পিয়া ডাকে। মিলনের আকাঙ্ক্ষার আসরে বসে, চৈতালি চাঁদ যেন বিদায়-সঙ্গীত না গায়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে (বৃহস্পতিবার, জ্যৈষ্ঠ ১৩৪২) কলকাতার 'রংমহল থিয়েটার' মঞ্চে সুধীন্দ্রনাথ রাহার রচিত 'সর্বহারা' নাটক মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ১ মাস।
- মঞ্চনাটক: সর্বহারা। নাট্যকার: সুধীন্দ্রনাথ রাহা। পরিচালনা: বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। রংমহল থিয়েটার। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে ১৯৩৬ (বৃহস্পতিবার, জ্যৈষ্ঠ ১৩৪২)।
- রেকর্ড: টুইন [সেপ্টেম্বর ১৯৩৭ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৪)। এফ.টি. ১২০৯৩। শিল্পী: মিস্ লক্ষ্মী। সুর: নজরুল ইসলাম।
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ ও ব্রহ্মমোহন ঠাকুর[ নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, অষ্টম খণ্ড নজরুল ইন্সটিটিউট ১২ ভাদ্র, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৭ আগষ্ট, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ। দ্বিতীয় গান। পৃষ্ঠা: ৩৪-৩৭] [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, চাঁদ), নাট্যগীতি
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: দ্রুত দাদরা
- গ্রহস্বর: নসা