প্রভু তোমারে খুঁজিয়া মরি (probhu tomare khujiya mori)

প্রভু তোমারে খুঁজিয়া মরি ঘুরে ঘুরে বৃথা দূরে চেয়ে থাকি
তুমি অন্তরতম আছ অন্তরে নয়নেরে দিয়ে ফাঁকি॥
        তুমি কাছে থাকি খেল লুকোচুরি
        তাই বাহিরে চাহিয়া দেখিতে না পাই
যেমন আঁখির পল্লব নাথ দেখিতে পায় না আঁখি॥
মোরা ভাবি তুমি কত দূরে বুঝি গ্রহ তারকার পারে
বুকে যে ঘুমায় তারে খুঁজি বনে প্রান্তরে দ্বারে দ্বারে।
        বাহিরে না পেয়ে ফিরি যবে ঘরে
        দেখি জেগে আছ তুমি মোর তরে
যত ডাকি তত লুকাও হে চোর মোর বুকে মুখ রাখি॥

  • ভাবনুসন্ধান: পরমস্রষ্টা পরমাত্মা রূপে বিরাজ করেন মানুষের অন্তরে। তাঁর দর্শন মেলে  অন্তর্দৃষ্টিতে। বাইরের জগৎ দেখার চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিনি বিরাজ করেন অন্তরের অন্তরতম-লোকে।  পরমস্রষ্টার এই লুকোচুরি খেলার সন্ধান পেয়েছেন কবি। তিনি এই গানে মানবদেহে অবস্থিত সেই পর্মাত্মারূপী পরমস্রষ্টার  অন্বেষণের স্বরূপ তুলে ধরেছেন এই গানে।

    কবি মনে করেন, পরমাত্মা তাঁরই অন্তরে থেকে- যেন 'পাওয়া না-পাওয়া'র লুকোচুরি খেলায় মেতে রয়েছেন। মানুষ যখন বাইরের চোখ দিয়ে বাইরের জগৎ দেখে, তখন  সে তার চোখের পাতা দেখতে পায় না। কারণ চোখের পাতা চোখের অংশ হয়ে বিরাজ করে। তেমনি অন্তরের সাথে পরমাত্মা এমন ভাবে মিশে থাকেন যে, আপন মনোলোকের খবর জানার চেষ্টা করলেও- তার সাথে মিশে থাকা পরমাত্মার সন্ধান পাওয়া যায় না।

    মানুষ তার সাধারণ ভাবনা ও সংস্কারের বশে ভাবে, পরমস্রষ্টা রয়েছেন দূর আকাশের গোপনলোকে কিম্বা বনে প্রান্তরে। অথচ তিনি ঘুমঘোরে লুকিয়ে থাকেন প্রতিটি মানুষের অন্তরে। এই সাধারণ ভাবনার গণ্ডী পেরিয়ে, বাইরের জগতে তাঁর সন্ধান না পেয়ে কবি যখন তাঁর মনের ঘরে ফিরে আসেন, তখন তিনি অনুভব করেন- পরমাত্মা তাঁরই অন্তরের গভীরে সদা জাগ্রত হয়ে বিরাজ করছেন। তিনি জীবাত্মারূপী কবির প্রত্যাশ্যাতে যেন জেগে থাকেন। তারপরেও যতই তাঁরে কবি ডাকেন, ততই তিনি লুকোচুরির চোর হয়ে তাঁর বুকের গভীরে লুকিয়ে পড়েন। স্রষ্টার অন্বেষণে কবি তাঁকে অনুভব করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যেন অধরাই থেকে যান।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।  ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে  (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৪) টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৩ মাস।
     
  • রেকর্ড: টুইন [সেপ্টেম্বর ১৯৩৭ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৪)। এফটি ১২০৯৭। শিল্পী: মোহনলাল সুকুল (শুল্কা)। সুর: সুবল দাশগুপ্ত [শ্রবণ নমুনা]

    এর জুড়ি গান: অনাদরে স্বামী পড়ে আছি আমি

     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: আহসান মুর্শেদ।  নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (ঊনবিংশ খণ্ড)। ১৬ সংখ্যক গান] [নমুনা]
     
  • সুরকার: সুবল দাশগুপ্ত
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ, অন্বেষণ
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয়

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।