দাঁড়ালে দুয়ারে মোর কে তুমি ভিখারিনী (darale duare mor ke tumi vikharini)
দাঁড়ালে দুয়ারে মোর কে তুমি ভিখারিনী।
গাহিয়া সজল চোখে বেলা-শেষের রাগিণী॥
মিনতি-ভরা আঁখি ওগো কে তুমি ঝড়ের পাখি
(ওগো) কি দিয়ে জুড়াই ব্যথা কেমনে কোথায় রাখি
কোন্ প্রিয় নামে ডাকি' মান ভাঙাব মানিনী॥
বুকে তোমায় রাখতে প্রিয় চোখে আমার বারি ঝরে,
(ওগো) চোখে যদি রাখিতে চাই বুকে ওঠে ব্যথা ভ'রে।
যত দেখি তত হায়, ওগো পিপাসা বাড়িয়া যায়
কে তুমি যাদুকরী স্বপন-মরু-চারিণী॥
- ভাবসন্ধান: কোনো এক প্রেম-পিপাসিনী প্রেম নিবেদনে কবি-চিত্তকে উদ্বেলিত করেছে। সে নিজেকে নিবেদন করছে ভিখারিনীর মতো। কবির গুণমুগ্ধ এই নারী তার আত্মনিবেদনে কবিকেও যেন প্রেমের ভিখারী করছে। মুগ্ধ করেছে তার অপরূপ সৌন্দর্যে। এই প্রণয় নিবেদন কবির কাছে বেলা শেষের রাগিণীর মতো। যেন জীবন সায়াহ্নের ছায়া ফেলেছে সে নিবেদনে। সংসারের বহু যন্ত্রণাদগ্ধ জীবন পরিক্রমায় এই নারী ঝড়ের পাখির মতো বিধ্বস্ত। কোন সান্ত্বনা দিয়ে তাকে আপন করে নেবেন, কবি তার হদিস পাচ্ছেন না। কিম্বা কোন প্রিয় নামে ডেকে তার অভিমানী চিত্তকে শান্ত করবেন, কবি তাও জানেন না
কবি চান তার সকল যন্ত্রণার দূর করে তাকে আপন করে নিতে। তার এই যন্ত্রণাদ্গ্ধ জীবনের অনুভব কবির চোখকে প্লাবিত করে। তবু কবি ওই নারীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ। যতই তাকে দেখে, ততই তার প্রতি তার মোহ বেড়ে যায়। কবির কাছে মনে হয়, এই নারী সামান্যা নয়, যেন মরুভূমির কোনো স্বপ্নস্বরূপিণী।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে নজরুল আনুষ্ঠানিকভাবে মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানিতে যোগদান করেন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগষ্ট (বুধবার ২৭ শ্রাবণ ১৩৩৯), মেগাফোন কোম্পানি নজরুলের স্বকণ্ঠে গীত ৪টি গান রেকর্ড করে। এর ভিতরে এই গানটি ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ২ মাস।
- পত্রিকা: ভারতবর্ষ। আষাঢ় ১৩৪০ (জুন-জুলাই ১৯৩৩)। স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। পাহাড়ি-মিশ্র-দাদরা। [নমুনা]
- রেকর্ড: মেগাফোন। আগষ্ট ১৯৩২ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৩৯)। জে.এন.জি. ৪৪। শিল্পী: কাজী নজরুল ইসলাম। [রেকর্ড-লেবেল চিত্র] [শ্রবণ নমুনা]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম। [রেকর্ড-সূত্র]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- জগৎ ঘটক। ভারতবর্ষ। আষাঢ় ১৩৪০ বঙ্গাব্দ। [নমুনা]
- নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি, প্রথম খণ্ড (জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৩৭৫। পৃষ্ঠা: ১২-১৪] [নমুনা]
উল্লেখ্য, স্বরলিপিকার স্বরলিপির লিখেছেন-'গান খানি কবি নিজকণ্ঠে রেকর্ডে গেয়েছেন। দুঃখের বিষয় বর্ত্তমানে রেকর্ড খানি বাজারে পাওয়া যায় না। এই গানটী মধ্যমকে সুর ক'রে গাইতে হবে। যেমন: যিনি বি ফ্ল্যাট্ সুরে গান করেন, তিনি ডি সার্প সুর করে গাইবেন।'
- এস.এম. আহসান মুর্শেদ । নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (৩৫শ খণ্ড) [একুশে বই মেলা ২০১৩। নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] [নমুনা]
- পর্যায়: