আমার অহঙ্কারের মূল কেটে দে কাঠুরিয়ার মেয়ে (মা, মা গো) ( amar ohongkarer mul kete de kathuriar meye [ma,ma go])
মা, মা গো ─
আমার অহঙ্কারের মূল কেটে দে কাঠুরিয়ার মেয়ে,
কত নিরস তরু হ’ল মঞ্জুরিত তোর চরণ-পরশ পেয়ে॥
রোদে পুড়ে জলে ভিজে মা দিয়েছি ফুল ফল
শাখায় আমার, নীড় বেঁধেছে বিহঙ্গের দল।
বটের মত সারা দেহ মাগো মায়ার জটে আছে ছেয়ে॥
ও মা মূল আছে তাই বৈতরণীর কূলে আছি পড়ি
নইলে হ’তাম খেয়াঘাটের পারাপারের তরী।
তুই খড়গের ভয় দেখাস মিছে
মুক্তি আছে এরি পিছে মাগো
তোর হাসির বাঁশি শুনতে পাবো অসির আঘাত খেয়ে॥
- ভাবসন্ধান: বাংলার বনাঞ্চলের লোককথায় বনদেবীর পূজার রীতি প্রচলিত আছে। এই দেবী বিভিন্ন বনভূমিতে বনদেবী, বনদুর্গা ইত্যাদি নামে পূজারীদের কাছে পূজিতা হয়ে থাকেন। বিশেষ করে, সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবী, মধু-সংগ্রহকারী ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজা করেন। তিনি নানা রূপে নানাভাবে বন এবং বনচর মানুষের রক্ষা করেন। কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি কাঠুরিয়ার মেয়ে নামেই অভিহিতা হয়ে থাকেন। এ গানের কাঠুরিয়ার কন্যারূপিণী কালীর কাছে তাঁ!র ভক্তের একান্ত কামনা, যেন তিনি মনোবনের অহঙ্কারের বিষবৃক্ষের মূল কেটে দিয়ে মানুষকে বিনয়ী করে তোলেন, একই সাথে জ্ঞানহীন নিরস প্রাণবৃক্ষের মূলে তাঁর অমৃতবারি সিঞ্চনে মনোপ্রাণ সরস ও সজীব করে তোলেন।
এই ভক্ত সংসারের দুঃখ বেদনায় জলে পুড়ে, ফুল-ফল দিয়ে দেবীকে পূজা করেছেন। তারপরেও তাঁর জীবনবৃক্ষের শাখায় বাসা বেঁধেছে সংসারের মায়াবী বিহঙ্গের দল। সংসারের লোভ-লালসা, হিংসা, কপটতা পরশ্রীকতারতার মতো মায়াময় অবলম্বন, যেন বটবৃক্ষের মতো তাঁর জীবনবৃক্ষকে জটার জঞ্জালে জড়িয়ে ধরে আছে।
ভক্ত মনে করেন এই বিষবৃক্ষের মূল অক্ষুণ্ণ আছে বলেই, পরপারে যাওয়ার বৈতরণীর কূলেই তিনি পড়ে রয়েছেন। নইলে তিনি নিজেই হতে পারতেন বৈতরণী পারাপারের খেয়াতরী। ভক্ত মনে করেন কালীর হাতের ভয় জাগানো খড়গের আড়ালেই রয়েছে মুক্তির অভয় বাণী। তিনি মনে করেন দেবীর অসির আঘাতে পেয়েই তাঁর প্রাণবৃক্ষ সজীব হয়ে উঠবে এবং তখনই শুনতে পাবেন দেবীর বংশীধ্বনিময় মুক্তির হাস্যধ্বনি।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৫৫) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৮ বৎসর ৯ মাস। উল্লেখ্য, এই সময় নজরুল মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর ৮৮১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ২৭১।
- রেকর্ড: এইচএমভি [মার্চ ১৯৪৯ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৫৫)]। এন ২৭৯৯০। শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ।] [শ্রবন নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- আহসান মুর্শেদ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, তেত্রিশতম খণ্ড, (নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪১৭। জুন ২০১০)। ১৬ সংখ্যক গান। রেকর্ডে মৃণালকান্তি ঘোষ-এর গাওয়া সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। পৃষ্ঠ: ৫২-৫৩] [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। কালী। প্রার্থনা।
- সুরাঙ্গ: রামপ্রসাদী
- তাল: দাদরা।
- গ্রহস্বর: সা