অনেক মানিক আছে শ্যামা তোর কালোরূপ-সাগরজলে ( onek manik achhe shyama tor kalorup-sagorjole)

অনেক মানিক আছে শ্যামা তোর কালোরূপ-সাগরজলে
আমার বুকের মানিক কেড়ে রাখ্‌লি কোথায় দে মা ব’লে॥
কত লতার কোল ক’রে খালি, ফুলের অর্ঘ্য নিস্ মা কালি
(মোর) সারা বনের একটী কুসুম আছে কি ঐ চরণ-তলে॥
একখানি মুখ খুঁজি মাগো তোর কণ্ঠের মুণ্ডমালায়
একটিবার মা সে মুখ দেখা, আবার কেড়ে পরিস্ গলায়।
                            (না হয়) রাখি্‌স পূজার থালায়।
অনন্ত তোর রূপের মাঝে, সে কোন্ রূপে মা কোথায় রাজে?
মোর নয়ন-তারা তারা হয়ে দোলে কি তোর বুকের কোলে॥

১. ফুলের অর্ঘ্য -এর পরিবর্তে কবি 'পূজাঞ্জলি' শব্দটিও ব্যবহার করেছেন।

  • ভাবসন্ধান: পরম ভক্তিতে শ্যামার স্নেহধন্য হয়ে কবি তাঁর সাথে থাকতে চান, এই কামনাই প্রার্থনা হয়ে এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে।  শ্যামার অগণন ভক্তের অর্ঘের মাঝে তাঁর অর্‌ঘ যেন হারিয়ে না যায়, সে শঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে এই গানে। 

    কবির কাছে তাঁর দেওয়া ভক্তি-অর্ঘ মানিকের মতোই মহার্ঘ। কবি জানেন শ্যামার অতল কালো-রূপসাগরে বহু ভক্তের অর্ঘ-মানিক সঞ্চিত আছে। এত সব মানিকের ভিতরে তাঁর দেওয়া অর্ঘ-মানিক কোথায় শ্যামা লুকিয়ে রেখেছেন, কবি তা জানেন না। ভক্তরা বহু লতার কোল খালি করা ফুল দিয়ে দেবীর পায়ে নিজেকে নিবেদন করেন। কবি ভেবে পান না সারা বনের অগণিত ফুলের মধ্যে তাঁর পায়ের তলে তাঁর দেওয়া নিবেদিত ফুলটি কোথায় স্থান পেয়েছে।

    শ্যামার কণ্ঠে থাকে অগণিত নরমুণ্ডে গাঁথা মালা। কবি এই নরমুণ্ডগুলোকে করুণাধন্য ভক্তের মুণ্ড হিসেবে কল্পনা করেছেন। কবি তাঁর মাঝে তাঁর নিজের মুখ দেখার প্রত্যাশা করেছেন। কবি ভাবেন দেবী না হয় একবার সে মুখ দেখিয়ে, মুণ্ডুমালায় আবার তা রেখে দেন। না হয় অবহেলায় তা তাঁর পূজার থালাতেই রাখুন।  এসব নিয়ে কবির আক্ষেপ নেই। যে কোনো ভাবেই হোক, দেবীর সান্নিধ্যে থাকাই তাঁর পরম প্রার্থনা।

    শ্যামার অনন্তরূপ। কোনো রূপে কোথায় তিনি বিরাজ করেন, কবি তা জানেন না। তিনি শুধু কামনা করেন, তাঁর ভক্তিভরা নয়ন-তারা যেন তাঁর বক্ষের মালায় তারকা হয়ে দোলে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪৬) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৫ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১০০৬। পৃষ্ঠা: ৩০৭] 
  • রেকর্ড: টুইন। নভেম্বর ১৯৩৯ (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪৬)। এফটি ১৩০৬৩। মতিলাল দত্ত

                  এর জুড়ি গান: আমায় আঘাত যত হান্‌বি (আমায় দুঃখ যত)

  • পর্যায়: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দু ধর্ম। শাক্ত, শ্যামাসঙ্গীত।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।