আমার হৃদয় অধিক রাঙা মা গো রাঙা জবাব চেয়ে (amar hridoy odhik ranga ma go ranga jobab cheye)

আমার  হৃদয় অধিক রাঙা মা গো রাঙা জবাব চেয়ে,
আমি    সেই জবাতে ভবানী তোর চরণ দিলাম ছেয়ে॥
                 মোর বেদনার বেদির ‘পরে
                 বিগ্রহ তোর রাখবো ধ’রে,
         পাষাণ দেউল সাজে না 
 তোর আদরিণী মেয়ে॥
         স্নেহ পূজার ভোগ দেবো মা, অশ্রু-পূজাঞ্জলী,
         অনুরাগের থালায় দেবো ভক্তি-কুসুম-কলি।
                 অনিমেষ আঁখির বাতি
                 রাখবো জ্বেলে দিবস রাতি,
তোর   রূপ হবে মা আরও শ্যামা (আমার) অশ্রুজলে নেয়ে॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানে কালী ও শ্যামার যুগপৎ এই  দ্বৈতরূপকে মাতা-কন্যার রূপে একীভূত করে দেবীকে  অদ্বিতীয়া রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। মাতৃরূপিণী কালীর পায়ে হৃদয়-পুষ্পকে উৎসর্গ করেছেন সাধক কবি, কারণ জবা ফুলের চেয়ে সে ফুল আরো মহার্ঘ্য।

    গানের প্রথম অন্তরাতে দেবীকে আদরিণী মেয়ে সম্বোধন করা হয়েছে। কন্যা রূপিণী আদরিণী শ্যমাকে, কবি তাঁর অপত্য স্নেহের বেদনাতে পাষাণ মন্দিরে একাকী রাখতে চান না। তিনি তাঁর হৃদয়ের স্নেহ-ব্যথাতুর বেদীতে, বিগ্রহ করে রাখতে চান। সেখানে তিনি অশ্রু-পূজাঞ্জলিতে দেবীকে পূজা দেবেন স্নেহ পূজার ভোগ হিসেবে। সে পূজায়  মাতা-কন্যা রূপিণী দেবীর পায়ে নিবেদিত  হবে ভক্তি ও স্নেহের অনুরাগের পূষ্পাঞ্জলি। তাঁর হৃদি-মন্দিরে ভক্তি স্নেহের আঁখি-দীপ জ্বলবে অহর্নিশি। কবির কল্পলোকের ভাবনায় প্রত্যাশা করেন- সাধকের প্রেমাশ্রুত স্নাত হয়ে  দেবী হয়ে উঠবেন আরও স্নিগ্ধ রূপবতী।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪৪) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, ব্রহ্মমোহন ঠাকুরের 'নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা' এবং কল্পতরু সেনের 'নজরুল গীতি সহায়িকা গ্রন্থ অনুসরণে জানা যায়, টুইন কোম্পানির  'এফ.টি ১২২৬৯' রেকর্ডে এই গানের সাথে অপর একটি গান প্রকাশিত হয়েছিল ১ মাসের ব্যবধানে। যা অসম্ভব।  উদাহরণ-

    টুইন কোম্পানির  'এফ.টি ১২২৬৯' রেকর্ডে নম্বরে দুটি গানের উল্লেখ রয়েছে। গান দুটি হলো-  'শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা' ও 'আমার অধিক রাঙা মাগো'। কিন্তু রেকর্ড প্রকাশের সময় উল্লেখ করা হয়েছে-
    • আমার অধিক রাঙা মাগো।  টুইন। জানুয়ারি ১৯৩৮। এফ.টি ১২২৬৯।  শিল্পী: জিতেন চক্রবর্তী
    • শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা। টুইন। ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮। এফ.টি ১২২৬৯।  শিল্পী: জিতেন চক্রবর্তী

রেকর্ডের কালানুক্রমিক প্রকাশের তালিকা অনুসরণ করলে, ধারণা করা যায়, এই রেকর্ডটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৭ মাস।

  • রেকর্ড: টুইন। জানুয়ারি ১৯৩৮  (পৌষ-মাঘ ১৩৪৪) এফটি ১২২৬৯। জিতেন চক্রবর্তী [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্‌রিস আলী [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বাবিংশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা ভাদ্র, ১৪০৭/ সেপ্টেম্বর, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ] দ্বিতীয় গান। [নমুনা]
  • পর্যায়:

    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত সঙ্গীত। শ্যামাসঙ্গীত। দ্বৈতসত্তা, মাতা-কন্যা

    • সুরাঙ্গ: স্বকীয়

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।