আমার হৃদয় হবে রাঙাজবা দেহ বিল্বদল (amar hridoy hobe rangajoba deho billodol)

  আমার   হৃদয় হবে রাঙাজবা দেহ বিল্বদল,
  মুক্তি   পাবো ছুঁয়ে মুক্তকেশীর চরণতল॥
  মোর   বলির পশু হবে সর্বকাম,
  মোর   পূজার মন্ত্র হবে মায়ের নাম,
  মোর   অশ্রু দেবো মা’র চরণে সেই তো গঙ্গাজল॥
  মোর   আনন্দ মাকে দেবো তাই হবে চন্দন,
  মোর   পুষ্পাঞ্জলি হবে আমার প্রাণ মন।
  মোর   জীবন হবে আরতি-দীপ,
  মোর   গুরু হবেন শঙ্কর-শিব,
  মোর   কাঁটার জ্বালা পদ্ম হবে শুভ্র সুনির্মল॥

  • ভাবসন্ধান: প্রথাগত কালীপূজার আনুষ্ঠানিকতাকে পরিহার করে, এই গানের কালী-সাধক নিজেকে নিবেদন করেছেন পূজার অন্তর্ননিহিত পূজার্ঘে। তিনি এই পূজার অর্ঘে বাইরের কোনো উপকরণ ব্যবহারের পরিবর্তে  সর্বার্থে নিবেদন করেছেন নিজেকে।

    তিনি জবাফুল ও বেলপাতার পরিবর্তে তাঁর হৃদয়কেই অর্ঘ হিসেবে নিবেদন করেছেন দেবীর পায়ে। কারণ মুক্তিরূপিণী কালী মুক্তকেশী, তাই সাধক মনে করেন হৃদয়-অর্ঘ নিবেদনেই তাঁর সর্বমুক্তি।

    এই সাধকের কাছে সর্বকামই (সকল কামনা) হলো পশুবৃ্ত্তি। তাই তিনি প্রাণী পশুর পরিবর্তে  সর্বকামের বিসর্জনকেই শ্রেষ্ঠ বলি হিসেবে নিবেদন করতে চেয়েছেন। তাঁর কাছে মাতৃরূপিণী কালী নামই একমাত্র পূজার মন্ত্র। পাপের গ্নানি ভরা হৃদয়কে পূণ্যময় করার আনন্দ-বেদনায় ঝরে পড়া অশ্রুই হবে তাঁর গঙ্গাজল। তাঁর আনন্দই দেবীকে দেওয়া আনন্দ-চন্দন। আর পুষ্পাঞ্জলি হবে তাঁর মন-প্রাণ।

    সাধকের জীবন-প্রদীপ হবে দেবী-পূজার আরতি-দীপ। তাঁর কাছে জগৎগুরু শিবই পরম গুরু। তাঁর যাপিত জীবনের সকল কাঁটার জ্বালা হবে শুভ্র সমুজ্জ্বল জীবনপদ্ম।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ নভেম্বর ১৯৩৯ (সোমবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৩৪৬) কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে 'রক্তজবা' নামক একটি গীতি-আলেখ্য প্রচারিত হয়েছিল। এই গীতি-আলেখ্যে এই গানটি ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৬ মাস।
     
  • বেতার: রক্তজবা । (গীতিচিত্র),। রচয়িতা: অবিনাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২০ নভেম্বর ১৯৩৯ (সোমবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৩৪৬)। সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬.১০।
    • সূত্র:
      • বেতার জগৎ। ১০ম বর্ষ, ২২শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৮৭৭
      •  নজরুল যখন বেতারে। আসাদুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমী। মার্চ ১৯৯৯। পৃষ্ঠা: ৭৬।
         
  • রেকর্ড:
    • ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার ৫ আশ্বিন ১৩৪৯) নজরুলের সাথে এইচএমভি কোম্পানির একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে এই গানটি ছিল।
    • এইচএমভি। জানুয়ারি ১৯৪৩ (১৬ পৌষ- ১৭ মাঘ ১৩৪৯)।  শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ। সুর: কমল দাশগুপ্ত [শ্রবণ নমুনা]
       
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্‌রিস আলী [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বাবিংশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা ভাদ্র, ১৪০৭/ সেপ্টেম্বর, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ] তৃতীয় গান। [নমুনা]
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্তসঙ্গীত। শ্যামাসঙ্গীত। আত্মনিবেদন
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয়
    • তাল: দাদরা
    • গ্রহস্বর: সা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।