এলো ঐ পূর্ণ শশী ফুল-জাগানো (elo oi purnoshoshi ful jagano)

এলো ঐ       পূর্ণ শশী            ফুল-জাগানো
বহে বায়       বকুল-বনে         ঘুম-ভাঙানো॥
লাগিল          জাফরানি-রঙ      শিউলি-ফুলে
ফুটিল          প্রেমের কুঁড়ি       পাপড়ি খুলে,
খুশির আজ    আমেজ জাগে     মন-রাঙানো॥
চাঁদিনী           ঝিলমিলায়        ঝিলের জলে,
আবেশে         শাপ্‌লা ফুলের    মৃণাল টলে,
জাগে ঢেউ      দীঘির বুকে       দোল-লাগানো॥
এসো আজ     স্বপন-কুমার      নিরিবিলি
খুলিয়া           গোপন প্রাণের    ঝিলিমিলি,
এসো মোর     হতাশ প্রাণে       ভুল-ভাঙানো॥

  • ভাবসন্ধান: গানটির বিষয়াঙ্গ প্রকৃতি (মহাজাগতিক)। পূর্ণ-চাঁদের জ্যোৎস্নার প্রভাবে প্রকৃতিতে যে যৌবনের অনির্বচনীয় আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে, তার কল্প-রূপ বর্ণনা করা হয়েছে এই গানে। এই গানের প্রকৃতির চাঁদ আর জ্যোৎস্নায় মিশে আছে, প্রকৃতির জীবজগতে যৌবন-চেতনা। কবি এই গানে বনভূমের প্রস্ফুটিত ফুল, জলাশয়ের তরঙ্গায়িত জল,,কুমারী গোপন চাওয়া ইত্যাদির ভিতর দিয়ে শৃঙ্গার রস উপস্থাপন করেছেন।    

    গানের স্থায়ীতে পূর্ণিমাকে সামগ্রিক অর্থে বলা হয়েছে ফুল-জাগনিয়া। পূর্ণিমার প্রভাবে প্রকৃতিতে জেগে ওঠে সুপ্ত যৌবন। জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ কিরণ-প্রবাহে বকুল বন জেগে উঠে যৌবন সৌরভে। শিউলি ফুলে লাগে যৌবনের জাফরানি রঙ, প্রেমের কুঁড়ি বিকশিত হয়, মেলে দেয় যৌবন পাপাড়ি।

    জ্যোৎস্নার আলোতে ঝিলমিল করে ওঠে ঝিল। বিকশিত শাপলা ফুলের মৃণাল (শাপলা ফুলের ডাঁটা) যৌবনের আবেশে দোল-খায়। দীঘির বুকে যে যৌবনঢেউ ওঠে, সেও জ্যোস্নারাতেরই প্রভাবে।

    জ্যোৎস্নার প্রভাব পড়ে নারনারী মনে। কুমারী মনে জাগে কল্পলোকের কুমারের সঙ্গলাভের আশা। তার মনের গভীরে লুকানো বাসনা জেগে উঠে। কুমারী প্রত্যাশা করে তার স্বপ্ন-কুমারও যেন তার গোপন প্রাণের বাসনা মেলে দিয়ে তার কাছে আসুক। স্বপন-কুমারের অপ্রাপ্তিতে কুমারী মনে হতাশা বাসা বাঁধে, কুমারী ভাবে স্বপন-কুমারের সঙ্গলাভে তার এ হতাশা কেটে যাক।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। বুলবুল পত্রিকার পৌষ-চৈত্র ১৩৪০(ডিসেম্বর ১৯৩৩- এপ্রিল ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।  এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৭-৯ মাস।
     
  • পত্রিকা: বুলবুল [পৌষ-চৈত্র ১৩৪০ বঙ্গাব্দ (ডিসেম্বর ১৯৩৩- এপ্রিল ১৯৩৪)]।
  • রেকর্ড: টুইন [আগষ্ট ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪২)রেকর্ড নং-এফটি ৪০৩২। শিল্পী: কুমারী বেবী (আশরাফুজ্জামান খানম)। সুর: নজরুল ইসলাম। [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: রশিদুন্ নবী [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, ষোড়শ খণ্ড। প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। পঞ্চম গান] [নমুনা]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (মহাজাগতিক, চাঁদ)
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।