হারানো আংটি
কাজী নজরুল ইসলামের রচিত লেটো গান (চাপান সং)
মহাভারতের আদি পর্বের মহাভারত। আদিপর্বের ৭২-৭৪ অধ্যায়ে বর্ণিত কাহিনি অবলম্বনে নজরুল এই চাপান সং-টি তৈরি করেছিলেন।
মুহম্মদ আয়ুব হোসেনের সংকলিত ও সম্পাদিত ‘দুখুমিয়ার লেটোগান’ নামক গ্রন্থ থেকে এই গানগুলো গৃহীত হয়েছে। এই গ্রন্থে (পৃষ্ঠা: ১৪৫-১৫৪) অন্তর্ভুক্ত ‘হারানো আংটি’ নামক চাপান সং-এ প্রারম্ভিক দৃশ্য ছাড়া ৯টি দৃশ্যান্তর রয়েছে। এই চাপান সং-এর চরিত্রগুলো হলো- ডাকসুরা, দুষ্মন্ত, সেনাপতি, সৈন্যগণ, রাক্ষস সর্দার, প্রথম রাক্ষস, দ্বিতীয় রাক্ষস, ভীমনাথ,কণ্ব মুনি, মহেশ, শকুন্তলা, অনুসূয়া, প্রিয়ংবদা রাজা, দুর্বাসা ও গোদাকবি।এই পালায় ভণিতায় নাম পাওয়া যায়- ‘নজরুল এসলাম’। এর চাপান অংশে ছিল ১৩টি গান। গানগুলো হলো-
১. যাবো মুনির তপোবনে। প্রথম গান। ডাকসুরার গান। ভণিতা নাই।
২.ওরে রাক্ষসেরি দল, এবার পালিয়ে চল। প্রথম দৃশ্যান্তর। রাক্ষস সর্দারের গান। ভণিতা নাই।
৩, শোন শোন শোন রাজা বালি তোমারে। পঞ্চম দৃশ্যান্তর (প্রথম গান)। শকুন্তলার গান। ভণিতা নাই।
৪. কি নাম তোমার বনবালা বল আমারে। পঞ্চম দৃশ্যান্তর (দ্বিতীয় গান)। দুষ্মন্তের গান। ভণিতা নাই।
৫. কণ্ব ঋষির কন্যা আমি । পঞ্চম দৃশ্যান্তর (তৃতীয় গান)। শকুন্তলার গান। ভণিতা নাই ।
৬. তোমার সেবায় মুগ্ধ আমি। পঞ্চম দৃশ্যান্তর (চতুর্থ গান)। দুষ্মন্তের গান। ভণিতা নাই।
৭. আমার নীল বরজের পান। পঞ্চম দৃশ্যান্তর (পঞ্চম গান)। শকুন্তলার গান। ভণিতা নাই।
৮. সখি ফুল ফুটেছে শাখে শাখে। পঞ্চম দৃশ্যান্তর (ষষ্ঠ গান)। শকুন্তলার গান। ভণিতা নাই।
৯.সখি যাবো যাবো রাজার কাছে। পঞ্চম দৃশ্যান্তর (সপ্তম গান)। প্রিয়ংবদার গান। ভণিতা নাই।
১০. ও রাজা, শকুন্তলার মনের ।পঞ্চম দৃশ্যান্তর (অষ্টম গান)। প্রিয়ংবদার গান। ভণিতা নাই।
১১. আসুন, আসুন, আসুন, রাজন । পঞ্চম দৃশ্যান্তর (নবম গান)। প্রিয়ংবদার গান। ভণিতা নাই।
১২. মন কাঁদে মোর ছেড়ে যেতে। অষ্টম দৃশ্যান্তর (প্রথম গান)। শকুন্তলার গান। ভণিতা নাই।
১৩. বল বল বল ওস্তাদ, শকুন্তলা কোথায় গেল । নবম দৃশ্যান্তর (প্রথম গান)। গোদাকবির গান। ভণিতা ‘নজরুল এসলাম’।
হারনো আংটি পালার 'উতোর সং' অংশ
উতোর অংশ অন্য কবির পরিবেশনা হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ কবি নজরুলের চাপান অংশের উত্তর দিতে না পারায়- দর্শক-শ্রোতাদের অনুরোধে নজরুলই এই উত্তর দিয়েছিলেন। মুহম্মদ আয়ুব হোসেন-সংকলিত 'দুখুমিয়ার লেটো গান' গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
কোন এক গ্রাম্য মেলার লেটোর আসরে "হারানো আংটি" চাপান সংটি অভিনীত হয়েছিল। কিন্তু দুখুমিয়ার এই চাপানের উতোর বিপক্ষ দল গাইতে পারেনি। দর্শক-শ্রোতা ও বিপক্ষ দলের ওস্তাদের অনুরোধ এই উতোর সং রচিত ও অভিনীত হয়েছিল পরের রাতে।'
হারানো আংটির উতোর অংশে গান পাওয়া যায় ৪টি। এর প্রথম গানে লেটো গানের ওস্তাদ হিসেবে নজরুলকে ' দুখু মিয়া' সম্বোধন করা হয়েছে। উতর অংশের ৪টি গান হলো-
১.প্রণাম করি সর্বজনে, আজি এ লেটোর আসরে। প্রথম দৃশ্য। প্রথম গান। দুখুমিয়া লেটো ওস্তাদের উদ্দেশ্যে।
২. মা মাগো, মা তুমি করেছ মোর লাজ নিবারণ। প্রথম দৃশ্য। দ্বিতীয় গান। শকুন্তলার গান। ভণিতা নাই।
৩. ওরে পালিয়ে চল, ওরে পালিয়ে চল । চতুর্থ দৃশ্যান্তর (প্রথম গান)। অসুরদের গান। ভণিতা নাই।
৪. ওস্তাদ, হারানো আংটির জবাব দিয়ে গেলাম এ আসরে। পঞ্চম দৃশ্যান্তর (প্রথম গান)। গোদাকবির গান। ভণিতা ‘নজরুল এসলাম'।